গত রাতে ঝড়ো বৃষ্টি হয়েছে । সেই সাথে মেঘের গর্জন আর ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো—কালবৈশাখী ! মেঘ বলল, বাবা আমার স্কুলে আগামীকাল বাষির্ক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আছে, সকালে কি বৃষ্টি থাকবে ? আমি বললাম জানি না বাবা, দেখা যাক কি হয়, তুমি এখন ঘুমাও। সে একটু পরে আবার বলে, বাবা— আমিতো যেমন খুশি তেমন সাজোতে, নাম দিয়ে এসেছি—আমি গাছ সাজবো ! আমি বললাম বাবা ঠিক আছে । তুমি এখন ঘুমাও ।
বৃষ্টি ভেজা সকাল—খুব চমৎকার রোদ চারপাশে ! দেখেই মনটা আনন্দে ভরে উঠল ! মেঘ বেচারা খুব টেনশন করছিল, সে সকালে স্কুলে যেতে পারবে কিনা ? সকালে যদি বৃষ্টি হয় ! সকালের নাস্তা শেষ করে আমরা তিন জন রিকশাতে রওনা করলাম সঙ্গে মেঘের—গাছ বন্ধু ! মা-বেটা মিলে খুব সুন্দর করে এই গাছ বানিয়েছে, কাগজ কেটে কেটে—তাতে রঙ করা হয়েছে । মেঘের সেকি আনন্দ ! আজ সে তার স্কুলে— গাছ বন্ধু হয়ে ঘুরে বেড়াবে, তার অন্য সব বন্ধুদের সাথে । তার ফুপিকে বলছে সে গাছ সাজবে তার স্কুলে ।
সেন্ট টমাস মিশন প্রাইমারী স্কুলটিতে প্রবেশ করতেই, মনটা ভরে গেল অন্য রকম—এক আনন্দে ! সকালের মিষ্টি রোদে ভরে আছে মাঠ । চারপাশের গাছ গুলো—বৃষ্টি ভেজা ! আর মূল চার্চটি যেন—খুব নির্বাক ! সেই কতোদিন—কতোদিন দিন তার বুকে ঘড়ি এটে দাড়িয়ে আছে নিরবে । এখানকার মানুষ এখনো—সেই ঘড়ি দেখে পথ চলে ! সময় সময় ঘন্টা বাজিয়ে সময়ের জানান দেয়—সেই চার্চের দেয়াল ঘড়ি ।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে— পরনে তাদের স্কুল ড্রেস হাতে লাল ফিতে বাঁধা । আমার কাছে খুব ভালো লাগলো, লাউড স্পিকারে— একটার পর একটা রবীন্দ্র সংঙ্গীত বাজছিল । আমার হিয়ার মাঝে / আমার পরানো যাহা চায় / আমি মুগ্ধ হয়ে সেই গানগুলো শুনছিলাম ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উপস্থিত অতিথিদের অব্যর্থনা জানিয়ে একটু পর ঘোষণা দিলেন—তাদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার । উপস্থিত অতিথীরা ক্ষুদে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সুন্দর সুন্দর কথা বললেন।
শুরু হলো—বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান । বিভিন্ন শ্রেনীর ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের একটা জায়গায় বসানো হয়েছে । সেখান থেকে ক্লাস অনুযায়ী ডাকা হচ্ছে, খেলা গুলোতে অংশ গ্রহনের জন্য । প্রতিযোগিতা গুলো ছিল বেশ মজার । যেমন— জুতা-মোজা দৌড়,আলু তুলে দৌড় , অংক দৌড় ,মটরসুটি দৌড়,ভারসাম্য দৌড়। ব্যাঙ লাফ, হাঁস হাঁটা, চকলেট দৌড় সহ নানা আয়োজন ।
আমরা অভিভাবকরা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এই সব খেলা দেখে—খুব মজা পেলাম । এরই মধ্য ছোট ছোট এই মানুষ গুলো যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা অংশ নিয়ে সারা মাঠ ঘুরতে লাগলো । কেউ সেজেছে — বঙ্গবন্ধু , কেউ কৃষক, কেউ মুক্তিযাদ্ধা, কেউ কমান্ডার,আবার কাউকে দেখা গেল ডাক্তার সেজে ঘুরে বেড়াতে; কেউ সেজেছে কৃষ্ণ কিন্তু রাধা’কে দেখা গেল না, আবার কেউ শিক্ষিকা সেজেছে, কেউ বা উকিল । মেঘ তার গাছ নিয়ে গাছ বন্ধু হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে—মনের আনন্দে ।
একটু পরে শিক্ষার্থীদের টিফিন দেয়া হলো । এর পর পর অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্য একটা প্রতিযোগিতা ছিল । সেটাও খুব মজা হলো । প্রতিযোগিতার শেষ পর্ব ছিল পুরষ্কার বিতরণ ।
এবার মাইকে ঘোষণা এলো — ব্যাঙ লাফে প্রথম পুরষ্কার পেয়েছেন, নিরব মিয়া ! আমি ছোট নিরব মিয়াকে দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলাম ! এরই মধ্য মাইকে ঘোষণা এলো মেঘের নাম— সে যেমন খুশি তেমন সাজোতে—প্রথম পুরষ্কার পেয়েছে !
বেটা’তো আমার মহা খুশি, সে প্রথম পুরষ্কার পেয়েছে ! আমি মেঘ’কে জড়িয়ে ধরে আদর করলাম । আমি মেঘ’কে বললাম, তোমার স্কুল’তো আমাকেও একটা পুরষ্কার দিয়ে দিল । মেঘ বলল, আমি দেখেছি—তুমি বেলুন ফুটানো’তে ২য় হয়েছ । এবার আমাদের বিদায়ের পালা, স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ীর পথে রিকশা নিলাম, সঙ্গে দুটি পুরষ্কার আর গাছ বন্ধু . . .
সেন্ট টমাস স্কুল, পুরান ঢাকা
০৬ মার্চ,২০১৭ © Monirul Alam