আমার বই পড়ার গল্প . . .

ছবি : © মনিরুল আলম

যতদূর মনে পরে আমার বই পড়ার এই অভ্যাস মায়ের কাছ থেকে পাওয়া । ছোটবেলায় দেখতাম ‘মা’ নিয়মিত নামাজ পরার পাশাশাপি কোরআন শরিফ পাঠ করতেন । আমাদের বাসায় নিয়মিত পত্র-পত্রিকা রাখা হতো । বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকা ‘ইত্তেফাক’ এবং মায়ের পছন্দের পত্রিকা ছিল—সচিত্র সাপ্তাহিক ‘বেগম পত্রিকা’ । আমি সে গুলোর পাতা উল্টাতাম, ভালো লাগতো । মায়ের ‘বেগম পত্রিকা’ পাঠটির অনুরাগের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ।

বিভিন্ন সূত্র থেকে থেকে জানা যায় — ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার কিছুদিন আগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেগম পত্রিকা’। এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তৎকালীন ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক নাসির উদ্দিন।

ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার পরে ১৯৫০ সালে বেগম পত্রিকার অফিস ঢাকার পাটুয়াটুলিতে আসে । বর্তমানে এটাই তার স্থায়ী ঠিকানা।বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন, কবি সুফিয়া কামাল। তার সাথেই কাজ করতেন নাসির উদ্দিনের একমাত্র কন্যা নূরজাহান বেগম।

এই বেগম পত্রিকা তৎকালীন সমাজে নারী পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং তাদের জন্য সাংস্কৃতিক বিনোদন দেবার একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। ১৯৬০ এবং ১৯৭০’র দশকে প্রতি সপ্তাহে বেগম পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের মতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডাকযোগে এই পত্রিকা পৌঁছে যেত। যা আমার ‘মা’ —আয়েশা সিদ্দিকা পত্রিকাটির একজন নিয়মিত পাঠক এবং গ্রাহক হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে ।

তো যা হোক — দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন আর বিভিন্ন গল্পের বই, কবিতার বই যেমন — সেবা প্রকাশনি নানা বই, রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর সিরিজ এবং বেতালের কমিকস ছিল আমার নিয়মিত পাঠের অন্যতম বিষয় । প্রিয় বন্ধু চন্দন, কামাল, লিপ্টন, অপু এবং আমার সংগ্রহে ছিল প্রচুর কমিকস, যা আমরা একে অপরকে শেয়ার করতাম। আমরা বাংলাবাজার পুরাতন বইয়ের মার্কেট থেকে কম টাকায় এসব বই কিনতাম।

এ ছাড়া আমি প্রতিবছর ২১শের বইমেলা আসলে সেখানে আমার নিয়মিত যাতায়াত হতো। বন্ধুদের ষ্টলে বসা, আড্ডা মারা ছিল আমার প্রধান কাজ । বিভিন্ন কবি, লেখকদের সাথে পরিচিত হওয়া তাদের সম্পর্কে জানা, তাদের বই কেনা ছিল তখন আমার নিয়মিত চর্চা । ২১শে বই মেলায় নানা ঘটনা এখন শুধুই স্মৃতির পাতায় !

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে পরবর্তী পেশাগত জীবনে প্রবেশের সাথে সাথে আজ পাঠভ্যাস হারিয়েছে। তবে প্রিয় দুই সন্তান মেঘ, ঢেউ’কে অনুপ্রেরনা দেওয়ার জন্য অনিয়মিত হলেও এই পাঠভ্যাস আবার শুরু করেছি । নিজের এই বই পড়ার অভ্যাসটা ফিরিয়ে আনা এবং ওদের ভিতরে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাই।

এবারের ২১শের বইমেলায় বেশ কিছু বই কেনা হয়েছে যা এবারের রমজান মাসে পাঠ শেষ করেছি । আমার কাছে মনে হয়েছে বই পড়ার সেই পুরোনো অভ্যাসটি আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে । আর এখন অনলাইনে বই অর্ডার করলে বই চলে আসে বাসায় । প্রযুক্তির কল্যাণে বিক্রয় ব্যবস্খাপনা বদলে গেছে !

‘আমাদের কুরআনের বন্ধুরা’ বইটির রিভিউ :

মেঘ, ঢেউ এর জন্য কেনা ছোটদের উপযোগী করে লেখা—‘আমাদের কুরআনের বন্ধুরা’ বইটি আমার পড়ার পাশাপাশি মেঘ এর পাঠ শেষ করেছে এই রমজানে । আমাদের কোরআন শরিফে বিভিন্ন নবী ও রাসূল এর যে বর্ণনা করা হয়েছে তার একটি বাংলা ভাষায় রচিত ছোটদের উপযোগী করে গল্পের আকারে বইটি লেখা হয়েছে । যা এক কথায়—সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন । বইটি পাঠ করে আমার ভালো লেগেছে । যদিও কিছু কিছু কোরআনের কাহিনী অতি সংক্ষেপ করার পাশাপাশি কিছু কিছু ঘটনা খুব দ্রুততার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে । মনে হয় শিশুদের কথা বিবেচনা করে এমনটা করা হয়েছে ।

তবে বইটির উল্লেখ যোগ্য দিক হলো— প্রতিটি কাহিনীতে কোরআনের সূরা এবং আয়াত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রতিটি কাহিনী শেষে ছোট ছোট প্রশ্ন করা হয়েছে, যার উত্তর প্রতিটি কাহিনীতে উল্লেখ আছে। যা পাঠ করলেই উত্তর দেয়া সম্ভব ।বইটির প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে। আর্ট পেপারে ছাপা হওয়া বইটির মান অনেকাংশে ভালো । প্রতিটি কাহিনীতে লেখার পাশাপাশি প্রতিটি পৃষ্ঠায় জলরঙ দিয়ে আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বইটির অলঙ্করণ নান্দনিক হয়েছে ।

ইফতার শেষ করে— চায়ের পানের পাশাপাশি একটু সময় নিয়ে বইটি শেষ করেছি । এবং এই বইটি নিয়মিত পাঠের অংশ হিসেবে আমার ব্যক্তিগত বইয়ের লাইব্রেরিতে স্থান দিয়েছি । ছোটদের কোরআন সম্পর্কে ধারণা পেতে একটা সুন্দর বই ।

বই : আমার কুরানের বন্ধুরা

লেখক: ইকবাল কবীর মোহন

প্রকাশনায় : নার্গিস মুনির, শিশুকানন

প্রচ্ছদ : আজিজুর রহমান

মূল্য : ২২০ টাকা

ডাইরি / ঢাকা, এপ্রিল ২০২৩
ছবি © মনিরুল আলম

ছোট গল্প / বৃষ্টি . . .

আজ বৃষ্টি হবে ! গুগোল তা জানিয়েছিলো কিন্তু তা পাত্তা দেইনি—তাই ভিজতে হলো । মইন— সেও আমার মতো বৃষ্টিতে ভিজেছে ! আজ আমরা লাল যাত্রায় হেঁটেছি । ১৯৭১ সালের সেই কালরাত্রির লাখো শহীদদের স্বরণে— আগুন ৭১ !

বৃষ্টি পথে হেঁটে যেতে আমি মইনকে বলছিলাম,—পাত্তা না দেয়া বিষয় গুলো কখনো কখনো ভীষণ ভালোলাগা হয়ে উঠে । যেমন আজকের এই চৈত্রের বৃষ্টিতে ভেজা ! ঢাবি’তে তখন মুষলধারায় বৃষ্টি ঝরছে । আমরা লাল যাত্রা থেকে বাড়ী ফিরে চলছি ।

আচ্ছা মইন তুই কি বলতে পারিস—২৫ মার্চের সেই ভয়াল রাত্রিতে কি এরকম বৃষ্টি ঝরে ছিল ? মইন আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,— হ্যাঁ ঝরে ছিল; তবে তা পাকসেনাদের বুলেট দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেওয়া—আমাদের পূর্বসূরিদের বুকের লাল রক্তের বৃষ্টি ! যাদের আত্মত্যাগে, আজ আমরা এই স্বাধীন দেশে, এই পথ দিয়ে হেঁটে চলছি— জয় বাংলা ।

ছোট গল্প / বৃষ্টি

মার্চ, ২০২৩

এখানেই প্রকৃতির শ্রেষ্ঠত্ব—মায়া !

ছবি: মনিরুল আলম

আমাদের দেশে ছয় ঋতুর ভিভাজন কাল হিসেব করলে এখন চলছে—শরৎকাল। অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাস মিলে শরৎকাল । নীলাকাশে সাদা মেঘেরা এই ঋতুতেই ভেসে বেড়ায় ! আবার হঠাৎ করেই আকাশে মেঘ জমে, ঝিরিঝির বৃষ্টি সব কিছু ভিজিয়ে দেয় ক্ষণিক সময়ের জন্য । দেখতে খুব অসাধারন লাগে । এটাই এই ঋতুর বৈশিষ্ট ।

সকালে ঘুম থেকে উঠেছি । বারান্দাতে দাঁড়াতেই দেখি গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে ! মানুষজন কেউ কেউ ছাতা মাথায় নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন ! যদিও বেশীর ভাগ মানুষ এই গুড়িগুড়ি বৃষ্টিকে পাত্তা দেন না ! বারান্দায় লাগানো ফুলগাছ গুলোর দিকে তাকাতেই দেখলাম সবগুলো গাছ বৃষ্টিতে ভিজে একাকার ! আমাদের সামনের বাসার টিনের চালা দেওয়া বারান্দা থেকে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তার উপর পরছে ! মেঘ-ঢেউ’কে ডাকলাম তারা তখনো ঘুম !

নয়নতারা গাছটিতে বেশ কয়েকটা সাদা রঙের ফুল ফুটে আছে । ফুল এবং পাতাতে বৃষ্টির ফোটা লেগে থাকা এবং তাতে সূর্যের আলো পরায়— বৃষ্টির ফোটা গুলো খুব অসাধারন লাগছে ! যদিও দৃশ্যটি খুব সাধারন খুব সহজেই যা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় । কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলেই মনের ভিতরে এক অসাধারন অনুভূতি তৈরি হয়— ভালো লাগে । আমার কাছে মনে হয়, এখানেই প্রকৃতির শ্রেষ্ঠত্ব—মায়া ! যদিও আমাদের বেশীর ভাগ মানুষদের এই সব ছোট ছোট অনুভূতি দিন দিন ভোতা হতে চলছে ! পাশাপাশি করোনাকালীন এই দুঃসময়ে আমরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি, প্রযুক্তি নির্ভরতায় অভ্যস্ত হয়ে পরছে আমাদের জীবন . . .

ডাইরি / ঢাকা, বুড়িগঙ্গা নদী
শরৎকাল, আশ্বিন ১৪২৮
লেখা ও ছবি: মনিরুল আলম

অন্তহীন এক ঘুম . . .

বিকেলের রোদে হেঁটে যায় পথিক,—

হিজলের ছায়াতল; বুনো ঝোঁপ;

মরা খাল; সাঁকো পেরিয়ে—

নি:সঙ্গ—সেই কবরস্থান; অন্ধ পেঁচাটি

বসে আছে— নি:শব্দে;

পিতা—পিতামহ আর স্বজনেরা

দিয়েছে অন্তহীন এক ঘুম—এইখানে;

তবু এই আমি,—

অযুত প্রার্থনায় দাড়িয়ে থাকি

এক প্রসন্ন সন্ধ্যায় ।

মানিকগঞ্জ, হিজুলিয়া / ডিসেম্বর ২০১৯

একটি বুক হাঁটা সরীসৃপ . . . 

সে দিন—আরমানিটোলার মাঠ পেড়িয়ে, 
একটা নব নিমর্িত ভবনে প্রবেশ করেছিলাম;

আলো-ছায়ার কারবারী—এই আমি;

একটা বেড়ালের সাথে দেখা হলো; 

তিন জন শ্রমিক তাদের স্বপ্নের কথা বলে গেলেন;

অথচ,সিড়িঁ দিয়ে নিচে নামতে নামতে অন্ধকার

আমাকে—সেই অতীতে নিয়ে গেল;
একটি বুক হাঁটা সরীসৃপ শব্দহীন অন্ধকার গহোবর 

থেকে বেড়িয়েছিল—তার চোখে ছিল বিভ্রান্তি ! 

পরিত্যক্ত পুরোনো ভবনটি ছিল তার আশ্রয়স্থল; 

এখন সে নেই—পুরোনো ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল !
সে দিন—আরমানিটোলার মাঠ পেড়িয়ে, 

একটা নব নিমর্িত ভবনে প্রবেশ করেছিলাম—এই আমি । 

-মনিরুল আলম 

আরমানিটোলা, পুরান ঢাকা

০৭, এপি্রল, ২০১৬

এ শহর দোয়েলের . . . 

এই শহরে এখনো—দোয়েলেরা, শালিকেরা ঘুড়ে বেড়ায়; সেদিন পৌষ-সকালে  দেখা হলো—সবুজ পাতাটির নিচে—লাল বট ফলের আশায় তারা ঘুড়িতেছে, ঘুড়িতেছে—অতপর—অন্ধকার সন্ধ্যা; নিয়ন আলো; বাদুড়ের দল ঝাঁকে ঝাঁকে উড়িতেছে—সেই সব লাল লাল বট ফলের আশায় ! 

এই শহরে এখনো—দোয়েলেরা, শালিকেরা বাস করে—সেই দিন; পৌষ সন্ধ্যায় !
মনিরুল আলম / রমনা উদ্যান, ঢাকা
৩০, ডিসেম্বর, ২০১৫ 

Eid al-Adha Festival . . . 

 

© Monirul Alam
 
Muslims attend Eid al-Adha prayers at the National mosque in Dhaka, Bangladesh, 25 September 2015. Muslims worldwide observe the Eid al Adha festival or Feast of the Sacrifice, when they are slaughter cattle, goats and sheep in commemoration of the Prophet Abraham’s readiness to sacrifice his son to show obedience to God. 

অই গরু,গরু বলে চিৎকার . . . 

  

১.স্থানটি ঢাকার শ্যামপুর গরুর হাট । দিনটি ছিল ২২, সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, ২০১৫। বৃষ্টির পানি আর কাদাতে পুরো জায়গা সয়লাব হয়ে আছে এর মধ্য গরু কিনতে আসা লোকজন হাটে ঘোরাঘুরি করছে —তবে কেউ গরু কিনছেন না । কাদা-পানিতে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম —গরুর পোট্রেট ছবি তুলালম, এই পোট্রেট তুলতে গিয়ে লোকজনের বেশ ভীড় জমে গেল ! অনেক গরুর ব্যাপারী আগ্রহ করে বলল, মামা আমার গরুর ছবি তুলেন ! হাট থেকে বের হয়ে গেলাম নদীর ঘাটে । সেখানে বুড়ীগঙ্গা নদী দিয়ে ট্রলারে করে নিয়ে আসা গরু গুলো নামানো হচ্ছে । 
অনেক গুলো ট্রলার ঘাটে ভীড়ে আছে । ট্রলার গুলোতে গরু বোঝাই করা— একটা একটা করে গরু নামানো হচ্ছে । ট্রলার থেকে এক একটা গরু লাফিয়ে লাফিয়ে ঘাটের মাটিতে নামছে । গরু নামানোর সেই দৃশ্য দেখতে স্থানীয় অনেক লোকজন ভীড় করেছে, কিশোর-কিশোরদের উৎসাহটা অনেক বেশী—তারা গরু নামানোর দৃশ্যটি দেখে খুব মজা পাচ্ছে। গরু গুলো ট্রলার থেকে নামানোর পর হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর এই নিয়ে যাওয়া নিয়ে নানা কান্ড হচ্ছে—অনেক গরু ভয় পেয়ে দৌড়, গরুর রশি ধরে রাখা যায় না, আর গরুর সামনে থাকা মানুষ গুলো ভয়ে দে ছুট ! এরকম কান্ড একটু পরপর এখানে হচ্ছে ! ব্যাপারটি আমার নিজের বেলায় ঘটে গেল—অনেকটা যেন হঠাৎ করেই ! 
আমি ঘাট থেকে গরুর ছবি তোলা শেষ করে ফিরে যাচ্ছি—এমন সময় ঘটলো বিপত্তিটি ! আমি হেঁটে যাচ্ছি, হঠাৎ করে গরু,গরু বলে চিৎকার ! যে যেদিকে পারে দে ছুট ! আমিও দে ছুট ! ভাগ্য ভালো থাকায় —রশি ছাড়া দৌড়ানো গরুর গুতো থেকে বেঁচে গেলাম ! উপস্থিত লোকজন শুধু বলল, ভাই আপনি বড় বাঁচা— বেঁচে গেছেন । আর একটু হলে আপনাকে গুতো দিয়ে ফেলে দিত ! আমি বলালম জ্বী ভাই, ঠিক বলছেন, আমি দৌড়ানোর সময় একবার শুধু পিছনে তাকিয়ে ছিলাম, আর তখন দেখতে পেরেছিলাম—লাল রঙের কয়েকটা কাদা-পানির মধ্যই সামনের দিকে তেড়ে আসছে ! 
২. এই ঘটনাটি দুই বছর আগের, ২০১৩ সালে—তখন আমি বুড়িগঙ্গা ১ম সেতুর (বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু-১) উপর দাড়িয়ে আছি। সদরঘাট লঞ্চ র্টারমিনাল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চের ছবি তুলবো। শেষ সময়ে ছেড়ে আসা প্রায় প্রতিটি লঞ্চে থাকে উপচে পড়া মানুষের ভীড়। কোরবানির ঈদ থাকায় অনেকেই —গরু কিনে নিয়ে বাসায় ফিরছেন। আমি দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখলাম, পাশের হাঁট থেকে গরু কিনে —বাড়ী ফিরছেন কেউ কেউ। বেশ কিছু ছবি তুল্লাম। যাত্রী বোঝাই লঞ্চ, ট্রলারে করে গরু নিয়ে যাওয়ার নানা ছবি তুলছি থেমে থেমে।
হঠাৎ চোখে পড়লো তাদের-কে ! সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে দুই জন একটা গরু নিয়ে হেঁটে আসছেন। গরুটার রঙ কিছুটা লালচে কালো। গরুর মালিক গরুর রশিটি ধরে আছেন—আর তার পিছন পিছন সহকারী। হঠাৎ করেই, যেন গরুটা একটু থেমে গেল ! আর যেতে চাচ্ছে না, সামনের দিকে । গরুর মালিক— রশি ধরে টানাটানি শুরু করে দিল—আর বিপত্তিটা ঘটলো তখই ! গরুটার মেজাজটা গেল বিগড়ে— তখনেই গরুটা দিল একটা লাফ ! মালিক ও কম যায় না। সে রশিটা ধরেই রেখেছে। গরুর সহকারী চেষ্টার করছে গরুটাকে শান্ত করতে— কিন্ত ‍ কে শোনে কার কথা ! তিন জনের মধ্যে, শুরু হয়ে গেল রীতিমতো ধস্তাধস্তি। ততোক্ষণে আমি আমার ক্যামেরাতে— ছবি তুলতে শুরু করে দিয়েছি।
তিন জনের ধস্তাধস্তিতে, গরুটা একবার মাটিতে পরে গেল। তারপর তার রাগ যেন আরো বেড়ে গেল। সে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে একটা ঝাটকা মেরে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলো। মালিক কিন্তু তখনো গরুর রশিটা ধরে রেখেছে ! কিন্তু সে আর গরুর দৌড়ের সাথে পেরে উঠলো না। ব্যালেন্স হারিয়ে —পরে গেল সড়কের উপর ! হাত থেকে ছুটে গেল রশি ! আর গরুটির গন্তব্য তখন যে হাট ( হাসনাবাদ, কেরাণীগঞ্জ ) থেকে এসেছিল— সেই হাটের দিকে . . . 
২৪, সেপ্টেম্বর,২০১৫
পাতলা খান লেন, পুরান ঢাকা

আমরার, ছবি তুইলা রেপট করবাম . . . 

 

© Monirul Alam
 

আমরার, ছবি তুইলা রেপট করবাম ? আমি বলি আপনার নাম কি ? সে বলে মরিয়ম, দেশের বাড়ী ময়মনসিংহ । বাট্টায় টাকার ব্যবসা করেন অনেক দিন । ঈদের সময় এই ব্যবসা ভালো হয় । অনেকেই শখ করে নতুন টাকা নেন, তাদের কাছ থেকে । সে আরো বলে, আমরার তো ব্যাংক যাইতাম পারি নাই, আফনেরার মতো লোক, ( দালাল ) আমরার কাছে এই টাকা দেয় । আমরার কারবারি করি, বুছুইন ! 

তখন মধ্য দুপুর—বাংলাদেশ ব্যাংক এর মতিঝিল শাখায় একটা আ্যসাইমেন্টে ছিল, আঙুলের ছাপ নিয়ে নতুন টাকার নোট বিতরণের পরীক্ষামুলক পদ্ধতির ছবি তুলতে হবে । আমি ব্যাংকে প্রবেশ করতেই দেখলাম বেশ লম্বা লাইন—মানুষ, আঙুলের ছাপ এবং ছবি তুলে টোকেন সংগ্রহ করে টাকা সহ টোকেনটি কাউন্টারে জমা দিলেই পেয়ে যাচ্ছে—চকচকে নতুন টাকা ! হাসি মুখে সেই টাকা নিয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন । আমি কতর্ৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম । আমাদের প্রতিবেদক, শুভংকরের সাথে দেখা হলো, সে প্রতিবেদনটি করবেন—কথা হলো তার সাথে, শুভংকর আমাকে বলল, মনির ভাই—ব্যাংকের বাইরে একটা চক্কর দিয়েন ! সেখানে দেখলাম, টাকার বেচাকেনা হচ্ছে ! 

ব্যাংক থেকে বের হলাম । সেনাকল্যাণ ভবনের প্রধান ফটকের সামনে দেখলাম একটা ছোট জটলা ! বেশ কিছু নারী-পুরুষ সেখানে কিছু একটা নিয়ে বেশ ব্যস্ত ! আমার ক্যামেরাটি বের করা ছিল । আমি সেই জটলার দিকে এগিয়ে গেলাম । চকচকে নতুন টাকার বান্ডিল হাতে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজন নারী ! ওরা টাকার কারবারী —বাট্টা, নিয়ে নতুন টাকার নোট বিক্রি করে। একজনকে দেখলাম—খদ্দের এর সাথে টাকা বেচাকেনা করছেন। আমি সেই ছবিটা তুলতেই তার সঙ্গে থাকা ছাতা ফুটিয়ে মুখ ডেকে সড়কের উপর বসে পরলেন ! ততোক্ষণে আমার ছবি তোলা হয়ে গেছে । তার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করি— আমার প্রশ্ন করার আগেই সে আমাকে প্রশ্ন করে—আমরার, ছবি তুইলা রেপট করবাম ? আমি বলি আপনার নাম কি ? সে বলে মরিয়ম, দেশের বাড়ী ময়মনসিংহ । বাট্টায় টাকার ব্যবসা করেন অনেক দিন । ঈদের সময় এই ব্যবসা ভালো হয় । অনেকেই শখ করে নতুন টাকা নেন, তাদের কাছ থেকে । সে আরো বলে, আমরার তো ব্যাংক যাইতাম পারি নাই, আফনেরার মতো লোক, ( দালাল ) আমরার কাছে এই টাকা দেয় । আমরার কারবারি করি, বুছুইন ! 
ছবি তোলা শেষ করে ফিরে যাচ্ছি । হঠাৎ পেছন থেকে একজন ডাক দিলেন, ভাইজান ! আমার একটা ছবি তুলবেন ? আমি তাকিয়ে দেখি একজন রিকশা চালক, হাসি মুখে তার রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে । আমি ছবি তুলতেই সালাম দেওয়ার ভঙ্গি একটা হাসি দিলেন । তার নাম মান্নান,ঢাকা শহরে এসেছেন ভাগ্য পরিবতর্নের জন্য । কঠিন পরিশ্রমের কাজ রিক্সা চালিয়ে তার ভাগে্যর পরিবর্তন ঘটাতে চান ! আহা— মানুষের জীবন . . . 
২১, সেপ্টেম্বর,২০১৫

মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা