
মা— আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তার রুটিন নাস্তা করলেন, ওষুধ খাওয়ানো হলো । ছোট বোনের সাথে স্বাভাবিক আচরন করলেন । চা— খাওয়ানোর অনুরোধ করতেই, চা খেলেন । সে আজ নিজেই বললেন, সে এখন আর হাঁটতে পারেন না, উঠে দাঁড়াতে পারেন না, অন্যের সাহায্য ছাড়া বাথরুম করতে পারেন না ।
আজ তাঁর মায়ের কথা খুব মনে পরছিল, শুয়ে শুয়ে অনেক বার মা, মা বলে ডাকলেন, হয়তো তাঁর মায়ের কথা মনে পরেছে । ছোট বোন জিজ্ঞেস করলো, আপনি কোন মায়ের কথা বলছেন— উত্তরে বললেন, আমার ‘মা’ ! সে আরো বললেন আমার ‘মা’ অনেক আগেই মারা গেছেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল । মায়ের নাম জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, আমার মায়ের নাম আনোয়ারা খানম । বাবার নাম আনোয়ার হোসেন । আমাদের বাসার নম্বর জিজ্ঞেস করতেই নম্বর বলতে পারলেন । তাদের পরিবারে বড় ভাই মাসুদ ( আমাদের বড় মামা ) বলে ডাকলেন বার কয়েক । একটু পরেই আবার হারিয়ে গেলেন তার সেই অচেতন জগতে !
আমাদের ‘মা’ মাঝে মাঝে তার স্বাভাবিক আচরনে ফিরে আসেন । তখন সবার কথা বলেন, তার সংসারের কথা বলেন, তার জীবনের অনেক স্মৃতি মনে করতে পারেন । ‘মা’ স্বাভাবিক থাকলে আরো একটা কথা বলেন, আমি এমন হয়ে গেলাম কেন ? তার এই অসুস্থতা সে মেনে নিতে পারেন না ! নিয়মিত ওষুধ এবং সার্বক্ষণিক সেবা এখন মায়ের বেঁচে থাকার অন্যতম কারণ । নামাজের সময় হলে সে ঠিক ঠিক নামাজ পরার জন্য তৈরি হয়ে যান । ‘মা’ এখন ছোট বোনের সাহায্য নিয়ে নামাজ পরেন ।
মৃত্যু সবার জন্য নির্ধারিত । আমাদের সবাইকে একদিন
মৃত্যুবরণ করতে হবে । আমাদের মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে অনেক অনেক দোয়া । আল্লাহ যেন আমাদের ‘মা’ কে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেন । সবাই আমাদের মায়ের জন্য দোয়া করবেন ।
ছবির কথা : মায়ের এই ছবিটি আমাদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সময় তুলেছিলাম, ২৭ নভেম্বরের ২০১০ সালে । মা’কে মজা করে বলেছিলাম, মা সমুদ্র ভ্রমণে এলে সূর্যাস্তের সময় সবাইকে সূর্য হাতে নিয়ে ছবি তুলতে হয়, মা একটা সুন্দর হাসি দিয়ে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ।
ডাইরি / পুরান ঢাকা
১৫ আগষ্ট, ২০২১ ছবি: মনিরুল আলম