বাবা . . .

মানিকগঞ্জের হিজুলিয়ায় আমাদের কবরস্থান, ১৯৩৭ সালে এটা স্থাপিত হয় । ছবিটি ২০, ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে তোলা। ছবি: মনিরুল আলম

বাবা— কী এক অদ্ভুত এই আমি ! আজ কতদিন—কতমাস হলো দেখতে যাওয়া হয় না— তোমার সমাধি ! অথচ ঘোরলাগা এই জগৎ, সমাজ, সংসার, সময় দিব্বি চলে যায়— কিম্ভূতকিমাকায় ! ঐ দিকে তোমার সমাধি আজো দেখা যায়; তেত্রিশ বছর পর;

একা একা শুয়ে আছো—সেই হিজলের তলায় ! ঘাস ফড়িং, শালিকেরা উড়ে যায়; সেইসব শেয়ালের ডাক শোনা যায় ! অথচ তোমার সমাধিতে তুমি যেন এক অনন্য নিথর—মানবআত্মা !

ডাইরি / পুরান ঢাকা

মে ২০২৩ ছবি : মনিরুল আলম

ছবি: পোট্রট ছবিটি ফ্যামেলি অ্যালবামে থেকে সংগ্রহ ।

বাবা— তোমার জন্য ভালোবাসা . . .

আজকের আকাশে কোথায়ও চাঁদটাকে খুঁজে পেলাম না, আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে অসংখ্য তারা দেখলামতারা মিটিমিট করে জ্বলছে . . .

এটা প্রকৃতির নিয়ম বাবা-মা তাদের সন্তানকে প্রচন্ড ভালোবাসে । যা সন্তানের জন্য অমূল্য সম্পদ । আমাদের বাবা তার তিন সন্তানকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন, কিন্তু আমাদের বাবার ক্ষেত্রে সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটা ছিল, যতোটানা প্রকাশ্যে তার চেয়ে অনেক বেশী ছিল—অন্তরের । এমনিতেই বাবা খুব কম কথা বলতেন, চুপচাপ থাকতে পছন্দ করতেন ।

আমি ছোট বেলায় খুব দুরন্ত ছিলাম, বাবা’কে খুব ভয় পেতাম ! যতোটা না ভয় পেতাম মা’কে । মাথার মধ্যে বুদ্ধি আটতাম কি করে তাকে ফাঁকি দেওয়া যায় ! আজ এই সময়ে এসে ভাবি, বাবাটাই আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন ! বাবা, সন্ধ্যা তারার দেশে দিয়েছেন— অন্তহীন ঘুম !

আজ আমাদের বাবার ২৯তম মৃত্যু বাষির্কী। আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই হিজুলিয়াতে গেছেন। সেখানে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে । আমাদের যাওয়া হয়ে উঠেনি, আমাদের মেঘ ( ছোট বাবা ) স্কুলে স্কুলে ভর্তি যুদ্ধ পরীক্ষায় লিপ্ত হয়েছে । তাকে নিয়ে আমরা এ স্কুল ও স্কুল দৌড়ে বেড়াচ্ছি ।

মনটা বিষন্ন থাকায় রাতের বেলায় ছাঁদে উঠলাম। খানিকটা চুপচাপ বসে থেকে, বাবার সঙ্গে আমার কিছু স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করলাম । পেশায় আইনজীবি হওয়ায় দিনের বেলা তার সময় কাটতো আদালত পাড়ায়। সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত অবধি তার চেম্বারে । অনেক রাত জেগে কাজ করতেন, মাঝে মাঝে ছাঁদে পায়চারি করতেন ! রাত গভীর হলে ঘুমাতে যেতেন ।

আমাদের জন্য প্রত্যাশিত থাকতো ছুটির দিন গুলো, নিজে বাজার করতে খুব পছন্দ করতেন । তার পছন্দের খাবার ছিল ডিম ভাজা, ডাল আর ভাত। তার বড় একটা থালা ছিল, সেই থালাতে করে খুব মজা করে ডিম ভাজা দিয়ে ভাত মেখে আমাদের খেতে ডাকতেন । যদিও সেই দিনগুলি ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য, তখন আমরা কেবল হইচই, স্কুল আর নানী-দাদী বাড়ী যাই—দিনমান।আহা সেই সব সময় !

আজকের আকাশে কোথায়ও চাঁদটাকে খুঁজে পেলাম না, আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে অসংখ্য তারা দেখলাম — তারা মিটিমিট করে জ্বলছে ! মায়ের ফোন পেলাম। মা জানালেন, হিজুলিয়াতে বাবার স্বরণে মিলাদ মাহফিলের কাজটি ভালো ভাবে হয়েছে ।

বাবা— তোমার জন্য ভালোবাসা . . .

—পুরান ঢাকা

২০ ডিসেম্বর, ২০১৯

আজ বিশ্ব বাবা দিবস . . .

snapseed-37
© Monirul Alam / WITNESS PHOTO

বিশ্ব বাবা দিবস—সকল বাবা কে অভিনন্দন জানাই । কর্মব্যস্ত বাবা— নিজের সন্তানের জন্য সময় বের করুন । নিজের ছেলে-মেয়ে’র সাথে সময় করে খেলাধুলা করুন, শুধু মাত্র সাংসারিক দায়িত্ব বোধ টুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে—আপনার সন্তান’কে আরো ভালোবাসা দিন, সময় দিন।

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের ইউনিসেফ সাম্প্রতিক জরিপটি জানাচ্ছে—বিশ্বে অর্ধেকের বেশি শিশু তাদের বাবার সঙ্গে লেখাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে ! ৭৪টি দেশে এই জরিপ চালানো হয় । বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে এই বাবা দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে এখন ।

আমার বাবা আজ বেঁচে নেই । তিন সন্তানের জনক এই মহান মানুষটিকে ছোট বেলায় অনেক ভয় পেতাম । ভয়ে কাছে যেতাম না ! কিন্তু এটা ছিল—আমার ভুল ! বোঝা-পরার সময়টা পার করতে না করতেই, বাব চলে গেলেন —না ফেরার দেশে ! জমে থাকা কথা গুলো, বাবাকে— আর বলা হলো না !

আমার বাবা হারিয়ে, আরো এক বাবা পেয়েছি আমি —ছোট বাবা; আমার সন্তান । সেই ছোট বাবা ‘মেঘ’ কে নিয়ে আমার সময় কাটে—আদর-ভালোবাসা, মান-অভিমান বাপ-বেটা মিলে উপভোগ করি । বাবা মানুষটি যে ভয়ের না, বাবা যে জীবনের অনেক বড় বন্ধু —সেটা মেঘ ইতি মধ্যে জেনে গেছে । সে বাপ-সন্তানের এই সম্পর্ক—মন থেকে অনুভব করে !

বিশ্ব বাবা দিবসে মা-বেটা মিলে আমার জন্য— খুব সুন্দর একটা গিফট তৈরি করেছে ! সেই গল্পটা না হয়, অন্য কোন দিন করা যাবে । পিতা-সন্তানের ভালোবাসা অটুট থাকুক— আজীবন ।

সবাইকে বিশ্ব বাবা দিবসের ভালোবাসা . . .

পুরান ঢাকা
১৬ জুন ২০১৭

IMG_6901
© Hafizun Nahar / WITNESS PHOTO

বাবা—তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করে . . . 

নোট : বাবার এই ছবিটি পুরান ঢাকার কালাম ষ্টুডিও থেকে তোলা ।
বাবা—তোমাকে যে খুব দেখতে ইচ্ছে করে ! কত দিন যে তোমাকে দেখি না ! বুকের মধ্য খুব কষ্ট হয় ! একা একা নির্জনে কেঁদে ফেলি ! আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি—সেখানে অসীম শূন্যতা দেখি ! বাবা— কেন যে তোমার উপর বারবার এতো অভিমান হয় আমার—জানি না । আমি কাউকে বোঝাতে পারিনা . . .

আজ ২০ ডিসেম্বর আমার বাবার ২৬তম মৃত্যু বাষির্কী । ১৯৯০ সালের এই দিনে বাবা, না ফেরার দেশে চলে যান । সে দিনের সংবাদটা আমরা ফোনে পেয়েছিলাম । আমি তখন বাসাতে ছিলাম, ঠিক সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফোন আসে । ফোনটা আমার মা রিসিভ করেন—ও প্রান্তের কথা ঠিক বুঝতে না পেরে আমাকে ফোনটা দেন। আমি কথা বলে ততোক্ষণে বুঝে গেছি; আমরা—আমাদের প্রিয় বাবাকে চিরদিনের মত হারিয়ে ফেলেছি। সে আর কোন দিন ফিরে আসবে না আমাদের পরিবারের মাঝে । আহা ! আমার প্রিয় বাবা !

বাবা ব্রেন ষ্ট্রোক করেছিলেন । সে দিন হাইকোর্টে তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল । সেখানে অংশ গ্রহণ শেষে মতিঝিল এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই মাগরিবের নামায পরার সময় অসুস্থ বোধ করেন; অতপর সেখানে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন । 

ছোট মেঘ তার দাদা’কে দেখেনি। তাঁর কাছে, তার দাদা মানে ফ্রেমে বাঁধানো এক খানা সাদাকালো ছবি—তার দাদীর কাছে থেকে শোনা নানা কথামালা । জনসন রোডের কোর্ট এলাকার সামনে দিয়ে গেলেই—মেঘ আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, বাবা এটা কি দাদার অফিস ছিল ? আমি তাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করি, কে বলেছে তোমাকে— মেঘ বলে দাদী বলেছে । আমি বলি, হ্যাঁ এটা তোমার দাদার অফিস ছিল । আমরা তিন ভাই-বোন মিলে এখানে বেড়াতে আসতাম ছুটির দিনে । বাবা যখন—এই ঢাকা আইনজীবি সমিতির ( ১৯৮২-৮৩) সেক্রেটারি ছিলেন,তখন এখানে খুব আসা হতো নানা অনুষ্ঠানে । 

আমাদের বাবা—আমাদের গ্রামের বাড়ী হিজুলিয়াতে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন সঙ্গে তার বাবা-মা । বাবা আপনি ভালো থাকবেন । আমাদের বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন . . .

লিটন,লিপন,নাজু

পুরান ঢাকা, পাতলা খান লেন

২০ ডিসেম্বর, ২০১৬

The Family of Man

The family is both the fundamental unit of society as well as the root of culture. It is a perpetual source of encouragement, advocacy, assurance, and emotional refueling that empowers a child to venture with confidence into the greater world and to become all that he can be. . . MARIANNE E. NEIFERT

© Monirul Alam

07.Jan.2012.Pubile Kaliganj.Bangladesh- A Bangladeshi middle class family takes a pleasure time with their family picnic tour outskirt of Dhaka Punail Kaligonj .Number of Bangladeshi family take a short tour in their weekend   holyday especially in winter season. © Monirul Alam