অই গরু,গরু বলে চিৎকার . . . 

  

১.স্থানটি ঢাকার শ্যামপুর গরুর হাট । দিনটি ছিল ২২, সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, ২০১৫। বৃষ্টির পানি আর কাদাতে পুরো জায়গা সয়লাব হয়ে আছে এর মধ্য গরু কিনতে আসা লোকজন হাটে ঘোরাঘুরি করছে —তবে কেউ গরু কিনছেন না । কাদা-পানিতে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম —গরুর পোট্রেট ছবি তুলালম, এই পোট্রেট তুলতে গিয়ে লোকজনের বেশ ভীড় জমে গেল ! অনেক গরুর ব্যাপারী আগ্রহ করে বলল, মামা আমার গরুর ছবি তুলেন ! হাট থেকে বের হয়ে গেলাম নদীর ঘাটে । সেখানে বুড়ীগঙ্গা নদী দিয়ে ট্রলারে করে নিয়ে আসা গরু গুলো নামানো হচ্ছে । 
অনেক গুলো ট্রলার ঘাটে ভীড়ে আছে । ট্রলার গুলোতে গরু বোঝাই করা— একটা একটা করে গরু নামানো হচ্ছে । ট্রলার থেকে এক একটা গরু লাফিয়ে লাফিয়ে ঘাটের মাটিতে নামছে । গরু নামানোর সেই দৃশ্য দেখতে স্থানীয় অনেক লোকজন ভীড় করেছে, কিশোর-কিশোরদের উৎসাহটা অনেক বেশী—তারা গরু নামানোর দৃশ্যটি দেখে খুব মজা পাচ্ছে। গরু গুলো ট্রলার থেকে নামানোর পর হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর এই নিয়ে যাওয়া নিয়ে নানা কান্ড হচ্ছে—অনেক গরু ভয় পেয়ে দৌড়, গরুর রশি ধরে রাখা যায় না, আর গরুর সামনে থাকা মানুষ গুলো ভয়ে দে ছুট ! এরকম কান্ড একটু পরপর এখানে হচ্ছে ! ব্যাপারটি আমার নিজের বেলায় ঘটে গেল—অনেকটা যেন হঠাৎ করেই ! 
আমি ঘাট থেকে গরুর ছবি তোলা শেষ করে ফিরে যাচ্ছি—এমন সময় ঘটলো বিপত্তিটি ! আমি হেঁটে যাচ্ছি, হঠাৎ করে গরু,গরু বলে চিৎকার ! যে যেদিকে পারে দে ছুট ! আমিও দে ছুট ! ভাগ্য ভালো থাকায় —রশি ছাড়া দৌড়ানো গরুর গুতো থেকে বেঁচে গেলাম ! উপস্থিত লোকজন শুধু বলল, ভাই আপনি বড় বাঁচা— বেঁচে গেছেন । আর একটু হলে আপনাকে গুতো দিয়ে ফেলে দিত ! আমি বলালম জ্বী ভাই, ঠিক বলছেন, আমি দৌড়ানোর সময় একবার শুধু পিছনে তাকিয়ে ছিলাম, আর তখন দেখতে পেরেছিলাম—লাল রঙের কয়েকটা কাদা-পানির মধ্যই সামনের দিকে তেড়ে আসছে ! 
২. এই ঘটনাটি দুই বছর আগের, ২০১৩ সালে—তখন আমি বুড়িগঙ্গা ১ম সেতুর (বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু-১) উপর দাড়িয়ে আছি। সদরঘাট লঞ্চ র্টারমিনাল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চের ছবি তুলবো। শেষ সময়ে ছেড়ে আসা প্রায় প্রতিটি লঞ্চে থাকে উপচে পড়া মানুষের ভীড়। কোরবানির ঈদ থাকায় অনেকেই —গরু কিনে নিয়ে বাসায় ফিরছেন। আমি দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখলাম, পাশের হাঁট থেকে গরু কিনে —বাড়ী ফিরছেন কেউ কেউ। বেশ কিছু ছবি তুল্লাম। যাত্রী বোঝাই লঞ্চ, ট্রলারে করে গরু নিয়ে যাওয়ার নানা ছবি তুলছি থেমে থেমে।
হঠাৎ চোখে পড়লো তাদের-কে ! সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে দুই জন একটা গরু নিয়ে হেঁটে আসছেন। গরুটার রঙ কিছুটা লালচে কালো। গরুর মালিক গরুর রশিটি ধরে আছেন—আর তার পিছন পিছন সহকারী। হঠাৎ করেই, যেন গরুটা একটু থেমে গেল ! আর যেতে চাচ্ছে না, সামনের দিকে । গরুর মালিক— রশি ধরে টানাটানি শুরু করে দিল—আর বিপত্তিটা ঘটলো তখই ! গরুটার মেজাজটা গেল বিগড়ে— তখনেই গরুটা দিল একটা লাফ ! মালিক ও কম যায় না। সে রশিটা ধরেই রেখেছে। গরুর সহকারী চেষ্টার করছে গরুটাকে শান্ত করতে— কিন্ত ‍ কে শোনে কার কথা ! তিন জনের মধ্যে, শুরু হয়ে গেল রীতিমতো ধস্তাধস্তি। ততোক্ষণে আমি আমার ক্যামেরাতে— ছবি তুলতে শুরু করে দিয়েছি।
তিন জনের ধস্তাধস্তিতে, গরুটা একবার মাটিতে পরে গেল। তারপর তার রাগ যেন আরো বেড়ে গেল। সে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে একটা ঝাটকা মেরে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলো। মালিক কিন্তু তখনো গরুর রশিটা ধরে রেখেছে ! কিন্তু সে আর গরুর দৌড়ের সাথে পেরে উঠলো না। ব্যালেন্স হারিয়ে —পরে গেল সড়কের উপর ! হাত থেকে ছুটে গেল রশি ! আর গরুটির গন্তব্য তখন যে হাট ( হাসনাবাদ, কেরাণীগঞ্জ ) থেকে এসেছিল— সেই হাটের দিকে . . . 
২৪, সেপ্টেম্বর,২০১৫
পাতলা খান লেন, পুরান ঢাকা

আমরার, ছবি তুইলা রেপট করবাম . . . 

© Monirul Alam

আমরার, ছবি তুইলা রেপট করবাম ? আমি বলি আপনার নাম কি ? সে বলে মরিয়ম, দেশের বাড়ী ময়মনসিংহ । বাট্টায় টাকার ব্যবসা করেন অনেক দিন । ঈদের সময় এই ব্যবসা ভালো হয় । অনেকেই শখ করে নতুন টাকা নেন, তাদের কাছ থেকে । সে আরো বলে, আমরার তো ব্যাংক যাইতাম পারি নাই, আফনেরার মতো লোক, ( দালাল ) আমরার কাছে এই টাকা দেয় । আমরার কারবারি করি, বুছুইন ! 

তখন মধ্য দুপুর—বাংলাদেশ ব্যাংক এর মতিঝিল শাখায় একটা আ্যসাইমেন্টে ছিল, আঙুলের ছাপ নিয়ে নতুন টাকার নোট বিতরণের পরীক্ষামুলক পদ্ধতির ছবি তুলতে হবে । আমি ব্যাংকে প্রবেশ করতেই দেখলাম বেশ লম্বা লাইন—মানুষ, আঙুলের ছাপ এবং ছবি তুলে টোকেন সংগ্রহ করে টাকা সহ টোকেনটি কাউন্টারে জমা দিলেই পেয়ে যাচ্ছে—চকচকে নতুন টাকা ! হাসি মুখে সেই টাকা নিয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন । আমি কতর্ৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম । আমাদের প্রতিবেদক, শুভংকরের সাথে দেখা হলো, সে প্রতিবেদনটি করবেন—কথা হলো তার সাথে, শুভংকর আমাকে বলল, মনির ভাই—ব্যাংকের বাইরে একটা চক্কর দিয়েন ! সেখানে দেখলাম, টাকার বেচাকেনা হচ্ছে ! 

ব্যাংক থেকে বের হলাম । সেনাকল্যাণ ভবনের প্রধান ফটকের সামনে দেখলাম একটা ছোট জটলা ! বেশ কিছু নারী-পুরুষ সেখানে কিছু একটা নিয়ে বেশ ব্যস্ত ! আমার ক্যামেরাটি বের করা ছিল । আমি সেই জটলার দিকে এগিয়ে গেলাম । চকচকে নতুন টাকার বান্ডিল হাতে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজন নারী ! ওরা টাকার কারবারী —বাট্টা, নিয়ে নতুন টাকার নোট বিক্রি করে। একজনকে দেখলাম—খদ্দের এর সাথে টাকা বেচাকেনা করছেন। আমি সেই ছবিটা তুলতেই তার সঙ্গে থাকা ছাতা ফুটিয়ে মুখ ডেকে সড়কের উপর বসে পরলেন ! ততোক্ষণে আমার ছবি তোলা হয়ে গেছে । তার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করি— আমার প্রশ্ন করার আগেই সে আমাকে প্রশ্ন করে—আমরার, ছবি তুইলা রেপট করবাম ? আমি বলি আপনার নাম কি ? সে বলে মরিয়ম, দেশের বাড়ী ময়মনসিংহ । বাট্টায় টাকার ব্যবসা করেন অনেক দিন । ঈদের সময় এই ব্যবসা ভালো হয় । অনেকেই শখ করে নতুন টাকা নেন, তাদের কাছ থেকে । সে আরো বলে, আমরার তো ব্যাংক যাইতাম পারি নাই, আফনেরার মতো লোক, ( দালাল ) আমরার কাছে এই টাকা দেয় । আমরার কারবারি করি, বুছুইন ! 
ছবি তোলা শেষ করে ফিরে যাচ্ছি । হঠাৎ পেছন থেকে একজন ডাক দিলেন, ভাইজান ! আমার একটা ছবি তুলবেন ? আমি তাকিয়ে দেখি একজন রিকশা চালক, হাসি মুখে তার রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে । আমি ছবি তুলতেই সালাম দেওয়ার ভঙ্গি একটা হাসি দিলেন । তার নাম মান্নান,ঢাকা শহরে এসেছেন ভাগ্য পরিবতর্নের জন্য । কঠিন পরিশ্রমের কাজ রিক্সা চালিয়ে তার ভাগে্যর পরিবর্তন ঘটাতে চান ! আহা— মানুষের জীবন . . . 
২১, সেপ্টেম্বর,২০১৫

মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা 

সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা . . . 


প্রথমে আপনাকে ভাবতে হবে— পত্রিকার জন্য একটি প্রেজেন্টেবল ছবি । অথার্ৎ হাতের ছবিটি তুলে তার পর শিল্প ! মনে রাখতে হবে, আমার ছবিটা যেন পাঠক আকৃষ্ট হয়। খবু সহজেই ছবিটি পাঠকের সাথে যোগাযোগ তৈরি করতে পারে । আমি বিকাশ’দার সাথে এক মত, বিশেষ করে —যারা নিউজ ফটোগ্রাফী করেন, তাদের জন্য কথাটি খুব প্রযোজ্য ।

এক জন নিউজ ফটোগ্রাফারকে প্রতিদিন একটা ভালো ছবি তোলার জন্য চেষ্টা থাকতে হবে । হয়ত, প্রতিদিন ভালো ছবি হবে না, কিন্তু চেষ্টা থাকাটা জরুরী । দীঘর্ অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে মনে হয়— একটা ভালো ছবি তোলা খুব সহজ নয় ! ছবির কম্পোজিশন,লাইট, নিউজ কনটেন্ট, ক্রিয়েটিভিটি বিষয় গুলো প্রতিদিনের চচর্ার মাধ্যমে তৈরি হবে—নিজের মধ্য ।
কলকাতা থেকে এপি’র ফটোসাংবাদকি বিকাশ দাশ এসেছিলেন, বাংলাদেশে টি-টোয়েনটি ওয়াল্ডর্ কাপ ২০১৪ কাভার করতে। পাভেল ভাইয়ের আমন্ত্রণে তিনি এসেছিলেন প্রথম আলোর অফিসে গত ২৪ মাচর্, ২০১৪ । সেখানেই তার কাজ দেখা, ফটোগ্রাফী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল । সংবাদপত্র বা এজেন্সিতে কাজ করার দীঘর্ অভিজ্ঞতা গুলো তারা শেয়ার করেছিলেন সেদিন ।
লেখার সাথে পোষ্ট দেওয়া ছবিটি ১৯, জানুয়ারি, ২০১২ সালে প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল—এর নেপথ্যের ঘটনাটি হয়ত আর এক দিন বলা যাবে . . .

১৩, সেপ্টেম্বর,২০১৫

পাতলা খান লেন, পুরান ঢাকা