ছোট ছোট ভালবাসা . . . 

© Mursalin Abdulla
১.বৈশাখী ঝড়ো বৃষ্টি এখনো থেমে থেমে চলছে কোথাও কোথাও । ঢাকা শহরের কোনো কোনো সড়ক বৃষ্টির পানিতে সয়লাব ! শুধু ঢাকা শহর নয়—দেশের অনেক জায়গাতেই এই ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে । সামনের দিন গুলোতে আরো বৃষ্টি হবে, আসছে বর্ষা— ঋতু ! গতকাল এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। রাতের বেলাতে, বাসায় ফিরতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হলো ! বৃষ্টির পানিতে সিএনজি বন্ধ হলো বার কয়েক ! আর সিএনজি পেতেও খুব কষ্ট করতে হয়েছিল—সেই সময়ে !

আমাদের সুমন তার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি হিজুলীয়াতে বেড়াতে গিয়েছে— সেখানেও বৃষ্টি হচ্ছে । সে অবশ্য তার ফেসবুকে লিখেছে— বৃষ্টি হচ্ছে খুব, সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে—ঘনঘন ! গ্রামের বাড়ীর এই পরিবেশ তার খুব ভালো লাগছে ! 

বৃষ্টি আমার খুব প্রিয় । আর গ্রামের পরিবেশে সেই বৃষ্টি—অসাধারন ! ছোট বেলায় আমার, বর্ষা আর বৃষ্টি নিয়ে অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে—আহা! সেই সব বৃষ্টি ভেজা দিনগুলো ! 

২.ছোট মেঘ— তার দাদির জন্ম দিনে, খুব সুন্দর একটা উপহার দিয়েছে—তার দাদিকে । সে তার হাতে আঁকা একটা ছবি দিয়েছে । নিজে একটা ছোট খাম তৈরি করে, তাতে একটা চকলেট আর ছবি সেই খামে ভরে, দাদিকে বলে, দাদি তোমার জন্মদিনে—আমার গিফট ! আমি মেঘ’কে বললাম, তুমি ‘শুভ জন্মদিন দাদি’ লিখেছ বাংলায়, আর তোমার নাম কেন ইংরেজীতে লিখেছ ? মেঘ তার উত্তরে বলে—বাবা, আমি আমার নামের বানান এখন না দেখে ইংরেজীতে লিখতে পারি, তাই আমি আমার নামের বানান ইংরেজীতে লিখেছি। 

এই মুহূর্তে আহমেদ শরীফ স্যারের একটা কথা মনে পরে গেল—সুখ কেউ কাউকে দিতে পারে না, সুখ পেতে জানতে হয় । সুখ বাইরে নেই, সুখ চিত্তলোকে সৃষ্টি করতে হয় . . . 

পুরান ঢাকা

১১ মার্চ, ২০১৭

 GFMD Sammit in Bangladesh 

GFMD Summit in Bangladesh ~ Prime Minister Sheikh Hasina inaugurated the conference and urged the global community to focus on the migrant and refugee crisis across the world on 10 December 2016, in Dhaka, Bangladesh. The 9th annual meeting of the Global Forum on Migration and Development, GFMD, Dhaka representatives from 125 countries and over 30 UN agencies, international organisations, global civil society and business are participating in the three-day GFMD Summit. © Monirul Alam

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থেকে ওদের জন্ম . . . 

© Monirul Alam
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে কাজ শেষ করে বেরিয়েছি । পাশেই হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে ফুটে আছে সবুজ বুনো ঘাস ! সেই সব ঘাস গুলোর উপর জমে আছে ছোট ছোট জলকণা । সূর্যের আলোয় তারা ঝলমল করছে, ওরা দূর্বল হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় কায়ান্টের অংশ । ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থেকে ওদের জন্ম ! 

আর ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ সম্পর্কে যতোটুকু জানা গেল, এই নামটি এসেছে মিয়ানমার থেকে। স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ কুমির ! নগরবাসী এই কায়ান্টের প্রভাবে সৃষ্ট ঝিরিঝির বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে আরো দুই দিন . . . 

পুরান ঢাকা, কার্তিক ১৪২৩

২৭ অক্টোবর ২০১৬

© Monirul Alam
#MonirulAlam #Dhaka #Bangladesh #kyant #CyclonicStorm #rain #iPhone

সত্য এবং সুন্দরের গল্প . . .

স্কেচটি করেছে ক্ষুদে শিল্পী : আদিবা

গাইবান্দা শহরে এসেও দেখা হলো না শহুরে নদী—ঘাঘট’কে ! ইচ্ছা ছিল ঘাঘটের জলে সূর্য্যস্ত দেখবো। দেখবো—নদী পাড়ে মানুষের জীবন বৈচিত্র ! বাস থেকে নেমে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । একজন রিকশা চালক আমার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কোনটে যাবে বাহে ? আমি রিকশা চালকের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম—তিন গাছ তলা, কলেজ রোড, রাধাকৃষ্ণপুর । হামাক রিকশাত চল ! আমি রিকশাতে উঠে পড়লাম। রিকশা চালক মকবুলের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাই, কলেজ রোডের দিকে। 

তিন মেয়ে আর এক ছেলের জনক, মকবুল পুরো পরিবার নিয়ে এই শহরেই থাকেন । রিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেন । ব্যাটারি চালিত রিকশার জমা ১৫০ টাকা । জমা বাদ দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়, কখনো আরো কম,তবু সংসার চলে যায়—চালিয়ে নিতে হয় ! দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাকি দুই জন স্কুলে পড়ে । কথা প্রসঙ্গ জানা গেল, তার তিন মেয়ের পড়াশোনার মাথা ভালো, অভাবের কারণে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। 

শহরের এই প্রান্তে বর্ষা মৌসুমে বন্যা না হলেও, পূর্বপাড়ে শহরকে প্রতি বছর ডুবিয়ে দেয়—বন্যার পানি ! আর তখন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরে— কষ্ট বারে, জানালেন মকবুল। সংগ্রামী মানুষগুলো প্রকৃতির নিয়মে তা আবার সামলে উঠেন—জীবন চলে যায় ! 

তিন গাছ তলা—নামটা শোনার পর থেকে জায়গাটা, কেন তিন গাছ তলা নাম রাখা হলো, তা জানার আগ্রহ বেড়ে গেল ! যদিও আমার গন্তব্য এই ‘তিন গাছ তলা’ রিকশা চালক মকবুল ভাইকে আমার আগ্রহের কথা বলি—সে আমাকে জানান দেন, এই এলাকায় আগে তিনটা বট গাছ ছিল । এক সাথে জড়াজোড়ি করে ওরা থাকতো । ঐ বটগাছ তলায় মানুষের নানা— মিলন মেলা হতো । যদিও সেই বট গাছের দুটি গাছ, এখন আর আর নাই ! তবে নানা প্রতিকুলতা সহ্য করে এখনো টিকে আছে, ওদের একটি । ঐ গাছ গুলোর অবস্থানের কারণে এলাকাটির নাম হয়ে গেছে—তিন গাছ তলা । আমি তার কথা শুনে বললাম, বাহ ! বেশ মজার ইতিহাস । কিন্তু দুটো গাছ কেন কাটা হলো ? এর উত্তর মকবুল ভাই, দিতে পারলেন না । 

তিন গাছ তলা—গাছের নিচ দিয়ে আমাদের রিকশা যেতে যেতে,বেশ কিছু দোকান আমার চোখে পড়ল, সেইসব দোকান গুলোতে বসে লোকজন আড্ডা দিচ্ছেন, চা খাচ্ছেন, টেলিভিশন দেখছেন । তাদের মাথার উপর বেঁচে থাকা, সেই তিন গাছের—একটি গাছ দাঁড়িয়ে ! আমি তাকে দেখলাম, মনে মনে অভিবাদন জানালাম । খুব ভালো লাগলো এই জায়গাটা । অনেকটাই—নির্জন চারিদিকে সবুজ আর সবুজ ! আরো একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল, একটা পূজা মন্ডপ। লোকজন বসে আছে, ঢাক বাজানো হচ্ছে—শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপুজা । মকবুল ভাইকে, বিদায় জানিয়ে আমি, আমার গন্তব্যে ছুটলাম । 

গাইবান্ধা নামকরণ ঠিক কবে নাগাদ হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে একটা মজার কিংবদন্তী রয়েছে এই নামকরণে ! নানা তথ্য থেকে এবং এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়—আজ থেকে প্রায় ৫২০০ বছর আগে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় —বিরাট রাজার রাজধানী ছিল। বিরাট রাজার প্রায় ৬০ (ষাট) হাজার গাভী ছিল। মাঝে মাঝে ডাকাতরা এসে বিরাট রাজার গাভী লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতো। সেজন্য বিরাট রাজা একটি বিশাল পতিত প্রান্তরে—গো-শালা স্থাপন করেন। গো-শালাটি ছিল সুরক্ষিত এবং গাভীর খাদ্য ও পানির সংস্থান নিশ্চিত করতে তা নদী তীরবর্তী ঘেসো জমিতে স্থাপন করা হয়। সেই নির্দিষ্ট স্থানে গাভীগুলোকে বেঁধে রাখা হতো। প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই গাভী বেঁধে রাখার স্থান থেকে এতদঞ্চলের কথ্য ভাষা অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে—গাইবাঁধা এবং কালক্রমে তা গাইবান্ধা নামে পরিচিতি লাভ করে।

কাজ শেষ করে গাইবান্দা থেকে ঢাকায় ফিরলাম । আমাদের ক্ষুদে শিল্পী—আদিবা’কে বলালম, তুমি আমাকে, ‘তিন গাছ তলা’ একটা ছবি একে দাও তো ! যেখানে তিনটা বট গাছ থাকবে, একটা সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ । সে পুরো ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে,তার মতো করে একটা স্কেচ করে দিল—আমাকে। আদিবার আঁকা এই স্কেচটি এখানে ব্যবহার করলাম । 

ঘাঘট—নদীর জলে সূর্য্যস্ত দেখতে যেতে হলেও, একবার যেতে চাই সেখানে । যেমনটা সাদা পাহাড়ের দেশ, বিরিশিরির গিয়েছিলাম, সেখানে সোমেশ্বরী নদীতে দেখেছিলাম— সূর্য্যস্ত আর সেইসব মানুষের দৈনন্দিন জীবন . . .

পাতলা খান লেন, পুরান ঢাকা

অক্টোবর ২০১৬

সত্য এবং সুন্দরের গল্প . . . 

© Monirul Alam

পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী সড়ক দিয়ে হাটছি । দেখা হয়ে গেল—সুদিনের সাথে সে রামমোহন পাঠাগার থেকে বেড়িয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে ! আমি তাকে হাত ইশারায় ডাকলাম, সে আমার ইশারায় উত্তর দিয়ে, এতো টুকু শুধু বলল—দেখা হবে পরে । আমি বললাম আচ্ছা । আমি পুরান ঢাকার নবাববাড়ী আহসান মঞ্জিলের দিকে পা বাড়ালাম । সেখানে একটা আ্যাসাইমেন্ট আছে । 

পুরান ঢাকায় অবস্থিত আহসান মঞ্জিলের ছবি তুলছি । আমাদের পত্রিকার ( প্রথম আলো ) একাল-সেকাল পাতাতে যাবে । গুলসানারা সিটি মার্কেটে উপরে উঠলে, একটা সুন্দর টপ ভিউ হয় । তো সেই ভিউটা তোলার জন্য উপরে উঠলাম । আকাশের অবস্থা ভালো না গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে । শরতের আকাশ এরকম থাকার কথা না, কিন্ত তারপরও এই অবস্থা ! আমি ছবি তোলার জায়গা দেখে নিয়ে ছবি তোলা শুরু করলাম । 

ঐ মার্কেটের একজন নিরাপত্তা কর্মী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার ছবি তোলা দেখলেন । একটু পর সে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই আপনি কোন কোম্পানীর ? আমি তার দিকে তাকালাম, তারপর একটু হেসে তাকে বললাম, ভাই আমি প্রথম আলো কোম্পানীর ! তারপরের প্রশ্ন, ভাই আপনারা, এই যে ঘুইরা ঘুইরা ছবি তোলেন তার জন্য কি বেতন পান ? আমি বললাম জ্বী, বেতন পাই । আমাদের এই যে ঘোরাঘুরি করেন তার জন্য কি কোম্পানী কি আপনাদের খরচ-পাতি দেয় ? আমি বললাম জ্বী সেটা দেয় । ঢাকার বাহিরে গেলে দেয়,আর ঢাকার ভিতরে ঘোরাঘুরি করলে দেয় না । আপনাদের কোম্পানী তো খুব মজার ! আমার কোম্পানীতে কোন ঘোরাঘুরির সুযোগ নাই, খালি লাঠি হাতে মার্কেট পাহাড়া দিতে হয় ! তার সাথে কথা বলে বেশ আনন্দ পেলাম । সে এরকম আরো বেশ মজার মজার প্রশ্ন করলো । আমি তার উত্তর দিলাম। 

তার নাম—আল-আমিন । দেশের বাড়ী কুমিল্লা, বুড়িচং । মদিনা গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে কাজ করছেন । তিন মাস হলো ঢাকায় এসেছেন, এই পেশায় কাজ করছেন । আমি তার মজার মজার কথা শুনে তাকে বলালম, আমিন ভাই, আপনার একটা ছবি তুলি ? সে বলল, না ভাই আমি ছবি তুলি না । আমি তাকে বলালম, মুরব্বীরা অনুরোধ করলে সেটা রাখতে হয় । সে রাজী হলো, তার বেশ কয়েকটা ছবি তুললাম । সে ছবি গুলো দেখতে চাইল, তারপর বলল,ছবি গুলো ভালো লেগেছে তার । আমি তাকে বললাম, আপনি তো ছবি তুলতে চাইলেন না প্রথমে । সে খুব সুন্দর করে একটা হাসি উপহার দিল আমাকে ! তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে ফিরে চললাম আমার নিজস্ব গন্তব্যে । 

পাতলা খান লেন, পুরান ঢাকা

০৬ অক্টোবর ২০১৬

ক্যামেরা কাঁধে আবার ছুটবেন তিনি . . . 

© Monirul Alam

অনেক দিন পর আবীর ভাইয়ের সাথে দেখা হলো আজ ! ল্যাবএইড হাসপাতালে এসেছেন চেক আপ করাতে । তার হাতের অবস্থা আগের থেকে অনেকটা ভালো । আনন্দের সংবাদ হলো— এই সপ্তাহ থেকে আবার কাজ শুরু করছেন । আমরা, এই মানুষটিকে নানা আ্যসাইমেন্টে আবার দেখতে পাবো—ক্যামেরা কাঁধে ছুটে চলছেন । 

সবাই আবীর ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন . . . 

ল্যাবএইড হাসপাতাল

ধানমন্ডি, ঢাকা

অক্টোবর ২০১৬

সত্য এবং সুন্দরের গল্প . . . 

© Monirul Alam
সুদিন— সেদিন বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল —সত্য এবং সুন্দর কি ? আমি তার সেই উত্তর দিতে পারিনি । 

সকালে ঘুম থেকে উঠে কুঞ্জলতা আর মেহেদী গাছের ছবি তোলা শেষ করে ঘরে ফিরে যাচ্ছি—হঠাৎ করেই শুভ্রতা’কে চোখে পড়ল ! দেয়ালের ওপাশটায় দিব্যি বসে আছে—মাঝে মাঝে আমার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে । আসলে— আগের দিন রাতে, বিথোভেনের সুর আমাকে একটা সত্য এবং সুন্দরের মধ্যে আটকে রেখেছিল—দীর্ঘক্ষণ ! 

আজ সকালে, এখানে বৃষ্টি হয়নি—তাইতো ফুটে থাকা অলকানন্দা আর কাঠবেলিরা গল্প জুড়ে দিয়েছিল । আমি জানি না এদেরকে সত্য এবং সুন্দর বলে কিনা . . . 

পুরান ঢাকা, পাতলা খান লেন

সেপ্টেম্বর ২০১৬

সত্য এবং সুন্দরের গল্প . . . 

© Monirul Alam
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।

চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।

তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে . . . 

[ সৈয়দ শামসুল হক ] ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ – ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রয়াত কবি—সৈয়দ শামসুল হকের সাথে সেই অর্থে, আমার কোন স্মৃতি নেই ! নেই কোন দৃশ্যপট । স্মৃতির অতলে খুঁজে ফিরি সেই সব দৃশ্যপট । সেখানে দেখা দেন আর এক প্রয়াত কবি—শামসুর রাহমান ! মনে পরে তার শ্যামলী রোডের দোতলা বাসায় একবার ছবি তুলতে গিয়েছিলাম—আমরা । কবি এবং কবি পরিবারের চমৎকার সমাদরে আনন্দিত হয়েছিলাম সে দিন ! 

কবির একটা কথা আজও আমার খুব মনে পরে । কবির সাথে আমার প্রথম স্বাক্ষাতে তিনি বলেছিলেন— এই যে, আপনাকে আমি চিনি । আপনার মুখটা আমার অনেক দিনের পরিচিত । আমি তার সেই কথায় পুলকিত হয়েছিলাম, ছোট হাসি হেসেছিলাম । আর মনে মনে, ভাবছিলাম এতো বড় একজন কবি আমাকে কি ভাবে চেনেন ! আর আমাকে কিভাবেই বা মনে রাখলেন ! 

সময়টা ছিল ২০০১ সাল— তখন আমি পাঠশালায় কাজ করি, ফটোগ্রাফী করি । সেই সময়ে প্রথম আলো পত্রিকায় আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল চিঠিপত্র বিভাগে। লেখাটির শিরোনামটি ছিল ‘রক্তাক্ত আমার পহেলা বৈশাখ’ । পহেলা বৈশাখের দিন রমনা বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় দশজন নিহত হয়েছিলেন । সেই বিষয় নিয়ে আমার একটা অনুভূতির কথা লিখেছিলাম। ছাপা হয়েছিল ছবি সহ, পত্রিকাটিতে । 

আমার যতো দূর মনে পরে তার দুই/এক দিন পরে বাসায় বসে টিভি দেখছিলাম— এ চ্যানেল ও চ্যানেল দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখি চ্যানেল আইতে কবি সৈয়দ শামসুল হক আমার লেখা, ছাপা হওয়া সেই চিঠিটি পড়ছেন ! সেই অনুষ্ঠানটি দেখে সেদিন আমার একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল— মনে ! এরকম একজন কবির কন্ঠে আমার পুরো চিঠিটি আবৃত্তি শুনে যারপরনাই খুশি হয়েছিলাম । 

তারপর এই মানুষটির সাথে আমার পেশাগত কারনেই দেখা হয়েছে বার কয়েক নানা অনুষ্ঠানে । দূর থেকে মানুষটাকে দেখেছি, তার সম্পর্কে জেনেছি, তার ছবি তুলেছি । যতোদূর মনে পরে তার কয়েকটা পোট্রেট তুলেছিলাম, হয়তো এখন তা হারিয়ে ফেলেছি ! 

সেদিন তার বিদায় অনুষ্ঠানে ছিলাম বাংলা একাডেমিতে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে । শত মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ফুলে সিক্ত হলেন কবি ! তারপর— চিরদিনের মতো যাত্রা শুরু করলেন, আমাদের কবি । যেখান থেকে আর কখনো কোন মানুষ ফিরে আসে না ! এই বাংলার অন্যতম সেরা ভাষাশিল্পী, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক— আপনাকে অভিবাদন ! 

পুরান ঢাকা, পাতলা খান লেন

সেপ্টেম্বর ২০১৬

সত্য এবং সুন্দরের গল্প . . . 

© Monirul Alam
সে দিন—বৃষ্টি না হওয়ার গল্প বলেছিলাম । আজ কিন্তু সকাল থেকে, এখানে বার কয়েক বৃষ্টি হলো । আকাশ কালো করে মেঘ ডেকে ডেকে—বেশ ঝম-ঝমিয়ে নামলো ওরা ! যদিও তাদের আধিপত্যের স্থায়িত্ব বেশীক্ষণ ছিল না ! তবে, তারা জানান দিয়ে গেল—আবার আসবেন ! 

আমি তখন জীবনানন্দ দাশের ‘ঝরা পালক’ নিয়ে সবে বসেছি, আমার জানালার পাশে—সঙ্গে এক মগ চা । নাহ ! তাদের ঐ রকম ডাকাডাকিতে আর ঘরে বসে— থাকা গেল না ! মন বারবার তাড়া দিচ্ছিল, একবার না হয় দেখে আসি অলকানন্দা, কুঞ্জলতা আর কাঠবেলিরা—কি করছে ! এই বৃষ্টিতে ! 

মনে মনে যা ভেবেছিলাম, তাই হলো । দাপটে বাতাসের জোড়ে ! নিজেকে স্বাধীন ভেবে ! গাছের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে ; বৃষ্টি-জলে দিব্বি সাঁতার কাটছে ! হায় —অলকানন্দা ! 

আর এদিকে—কুঞ্জলতার দল, বৃষ্টি-জলে ভিজে ভিজে তার সোনালী ডানা মেলে ধরেছে। আকাশে উড়বে বলে ! আমি যখন এসব দেখছি, হঠাৎ করেই চোখে পড়ল দলটিকে ! তারা আমার প্রতিবেশী । বৃষ্টি থেমে যাবার পর; জমে থাকা বৃষ্টি-জলে নাইতে নেমেছে দলটি ! আমি এদেরকে—ধুসর কষ্ট বলে ডাকি . . . 

পুরান ঢাকা, পাতলা খান লেন

সেপ্টেম্বর ২০১৬