ছোট ছোট কথা . . .

রিক্সা চালক তোতা মিঞা ছবি: মনিরুল আলম

তার পরনে ফুলহাতা চেক শার্ট এবং চেক লুঙ্গী, মাথায় একটা লাল রঙের গামছা বাঁধা, পায়ে প্লাষ্টিকের সেন্ডেল বয়স আনুমানিক ৪২/৪৫ মুখে এক গোছা কাচাপাকা দাড়ি ! ঠোঁটের কনে কালচে লাল দাগ লেগে আছে, দেখলে বোঝা যায় তার পান চিবানোর অভ্যাস দীর্ঘ দিনের ।

মেঘ আর আমি তার রিক্সাতে করে ব্যাংকে যাচ্ছি । এর মধ্যে যানজটে আটকে গেলাম ইংলিশ রোড এলাকায় । এক দিকে যানজট আর অন্য দিকে প্রচন্ড রোদ । রিক্সার হুড তুলে দিয়ে রোদ থেকে খানিক রক্ষা করছি নিজেদের । আমাদের চালক সেও অন্য রিক্সার পিছনে দাড়িয়ে রোদের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করছে ! প্রচন্ড দাবদাহ শুরু হয়েছে; রিক্সাতে বসে থাকা কষ্টকর ! কিন্তু কিছু করার নেই, পাঁচ/ছয় মিনিট পরপর একটু একটু করে রিক্সা আগে বাড়ছে !

যানজটে বসেই আমাদের চালক সাহেবের সুখ-দু:খের খবর নিতে শুরু করি—সাংবাদিকতা করলে যা হয় ! এই গরমে ফুলহাতা শার্ট পরছেন কেন ? ফুলহাতা শার্ট পড়লে শরীরের চামড়া পুড়ে কম । এই যে দেহেন তার হাত দেখিয়ে আমাকে পার্থক্য বুঝান, আসলেই তাই রোদে পুড়ে যাওয়া অংশ কালো হয়ে আছে আর যে অংশে পুড়ে নাই তা শরীরের রঙে আছে । আমি আমার আশেপাশের রিক্সা চালকদের একনজর দেখলাম । বেশীর ভাগ চালক ফুলহাতা শার্ট পরে রিক্সা চালাচ্ছেন ! প্রকৃতির সাথে কখন কিভাবে যু্দ্ধ করে টিকে থাকতে হয়—এরা তা জানেন ! দেশের দক্ষিণ অঞ্চল বরগুনাতে ঘূর্ণিঝড় সিডর কাভার করতে গিয়ে দেখেছি, মানুষের জীবন শক্তি কতো দৃঢ হয় !এতো বড় ঝড় হয়ে যাওয়ার পরও তারা ঠিক ঠি ঘুরে দাড়িয়ে ছিলেন ।

ধীরে ধীরে তার সাথে কথা এগিয়ে নিতে থাকি—সারাদিন রিক্সা চালাইলে জমা বাদ দিয়া আডাইশো থেকে তিনশ টেহা থাকে । জমা হইলো ১০০ টাকা ।পরিবার লইয়া ঢাকায় থাহি জুরাই এলাকায়, নয় হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেই, আমার লগে আমার পোলায় কাম করে । দেশের বাড়ী বরিশাল । আগে কেরানীগঞ্জ এর ডকে কাজ করতাম, এহন কাম-কাইজ কম তাই রিক্সা চালাই—বইয়্যা থাকলে—বডি ডেড হইয়্যা যায় ! দুই বছর বইয়্যা ছিলাম । বডি ডেড হইয়্যা গেছিলো-গা । অহন মনে করেন সিকি আছে . . .

নয়া বাজার মোড়, পুরান ঢাকা

১১ এপ্রিল ২০১৯